শিক্ষা ও খেলাধূলাসহ কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই দেশের নারীরা। পুরুষদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। নারীদের সাফল্যের এ যাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্রিকেটে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মেয়েরা। ফুটবলে নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে সাবিনা, সানজিদারা।ক্রিকেট, ফুটবলের মত জনপ্রিয় খেলার সাফল্যের মাঝেও পিছিয়ে নেই কারাতে,শুটিং,ভারোত্তোলন এর মত খেলার সাফল্য। নিজের প্রতিভার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে, দেশকে স্বর্ন উপহার দেওয়ার মাধ্যমে দেশের ক্রিয়াজগৎকে সমৃদ্ধ করছে মেয়েরা। তাদেরই একজন মারজান আক্তার প্রিয়া, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস এ কারাতে ইভেন্টে নারী এককে অনুর্ধ ৫৫ কেজি শ্রেনির ফাইনালে পাকিস্তানের কাউসার সানাকে হারিয়ে দেশকে স্বর্ন পদক উপহার দেন।

ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল ফেনীতে জন্ম গ্রহনকারী এই স্বর্নকন্যার। খেলাধুলার পাশাপাশি ছাত্র জীবনেও বেশ সফল এই অ্যাথলেট। পড়াশুনা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। পারিবারিক, সামাজিক বাধারও সম্মুখীন হতে হয়েছে দেশের সফল এ নারী অ্যাথলেটকে। সম্প্রতি সকল ধরনের বাধাকে টপকে স্বর্ন ছিনিয়ে নেয়া এই স্বর্ন কন্যার কারাতেতে নিজের উঠে আসা, শৈশব, স্বর্ন জয়ের অনুভূতি নিয়ে কথা বলেছেন শ্যাডো নিউজের সাথে। আর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান।
শ্যাডো নিউজঃ আপনার জন্ম শৈশব বেড়ে ওঠা নিয়ে কিছু বলুন?
মারজান প্রিয়া: ঢাকাতেই বড় হওয়া। গ্রামে খুব কমই যাওয়া হয় কিন্তু জন্ম গ্রামে, ফেনীতে বাড়ি আমাদের।
শ্যাডো নিউজঃ বাংলাদেশে কারাতে খুব বেশি জনপ্রিয় নয়,তো আপনি কিভাবে খেলাটির সাথে জড়িয়ে গেলেন ?
মারজান প্রিয়া: স্কুল থেকে, ৭ম শ্রেনীতে খালেদ মন্সুর সিদাজি আসতেন, কিন্তু তা ছিল সাময়িক। ভালোভাবে শুরু করেছিলাম ৩ বছর আগে। এমনি আগে খেলাধুলা করতাম টুকটাক।
শ্যাডো নিউজঃ ক্যারাতেকে পেশা হিসেবে নিলেন কবে থেকে ?
মারজান প্রিয়া: যখন ন্যাশনালে রেজাল্ট করে আন্সার টিমে চান্স পেয়েছিলাম, স্বপ্ন শুরু হয় এস এ গেমস খেলার। প্রথমে ইচ্ছেটা ছিল ইন্টারন্যাশনাল খেলব। যখন সেখানে সফলতা আসতে শুরু করল এরপর উত্তেজনায় শিউরে উঠতাম এস এ গেমস এর কথা ভেবেই।
শ্যাডো নিউজঃ এস এ গেমসে তো আপনি স্বর্ন জয় করেছেন,তখনকার সে সময়ের অনুভুতি নিয়ে কিছু বলুন?
মারজান প্রিয়া: এটাতো পুরো স্বপ্নের মত। স্বপ্ন দেখতাম, যদি একবার গোল্ড পেয়ে যাই। এখন পূরন হয়েছে ভাবতেও অবাক লাগে।
শ্যাডো নিউজঃ আপনি তো পড়াশোনা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। অঙ্কন করা না খেলাধুলা, কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন.?
মারজান প্রিয়া: সবসময় খেলাধুলাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এখনো বদলায়নি। সবকিছুর উপরে খেলাধুলাটাই আগে।
শ্যাডো নিউজঃ একজন মেয়ে হিসেবে ক্রিয়াক্ষেত্রে আসাটা আমাদের দেশে একটু কঠিনই বলা যায়। পারিবারিক, সামাজিকভাবে বাধার ও শিকার হতে হয়।তো আপনি কিভাবে সকল বাধাকে জয় করলেন ?
মারজান প্রিয়া: পরিবার থেকেই প্রথম বাধা আসে এখনো বাধা দেয়। এর অবশ্য অনেক কারণও আছে। আসলে আত্ববিশ্বাস অনেক বেশি ছিল আর খেলাটার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসে।
আর বাধা জয় করেছি বললেও ভুল হবে। এখনো অনেক জায়গায় শুনতে হচ্ছে মেয়ে হয়ে খেলাধুলা করছ? ফিউচার কি? পরে কি করবে?
শ্যাডো নিউজঃকরোনার কারনে তো সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। সবারই ঘরে বসে সময় কাটছে। আপনার সময় কীভাবে কাটছে?
মারজান প্রিয়া: বাসায় বসে সারাদিন সময় কাটছে, পরিস্থিতি এখনো অনেকটাই খারাপ দেখে বাইরে বের হওয়া মুশকিল। পরিবারের সাথেই সময় পার হচ্ছে।
শ্যাডো নিউজঃ ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি,নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
মারজান প্রিয়া: অবশ্যই কারাতের সর্বোচ্চ আসরে নিজেকে দেখতে চাই। সেখান থেকে বাংলাদেশের হয়ে পদক আনতে চাই ইনশাল্লাহ। ক্রিকেটের মত, কারাতেকেও যাতে সবাই সমানভাবে গুরুত্ব দেয় সেজন্য বড় বড় আসরগুলো থেকে সফলতা আনতে চাই।
শ্যাডো নিউজঃ তরুন প্রজন্মের জন্য আপনার কি বলার আছে?
মারজান প্রিয়াঃ আমি তাদের জন্য উপদেশ দিব, তারা যেন ঘরের চারদেয়ালের মাঝে আটকে না থেকে,মাঠে আসে। খেলাধুলা মানে যে পেশাদার হতে হবে তা না,শারীরিক সুস্থতারও একটি ব্যাপার থাকে।খেলাধুলা করলে শরীর সুস্থ থাকে, মন ভাল থাকে, যে কোন কাজে মন বসে। সর্বোপরি নিজেকে ভাল রাখতে খেলাধুলায় আসতে হবে
আপনার মতামত দিন