‘কৌশিক’ বাংলার একজন বীর, যোদ্ধার নাম। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলে মামার বাড়িতে জন্ম তার। বাড়ির পাশেই স্কুল মাঠে খেলা দেখতে দেখতে ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগার শুরু। ৯০ এর দশকে নড়াইলের ক্রিকেটার, সংগঠক শরীফ মোহাম্মদ হোসেনের কোচিং এর মাধ্যমে শুরু হয় তার ক্রিকেটে পথচলার। এরপর মাগুরায় বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে বিকেএসপির কোচ বাপ্পির সান্নিধ্যে এসে বোলিংকে শানিয়ে নেন। বোলিংয়ের গতি ও সুয়িংয়ের কারণে সুযোগ পান খুলনা বিভাগ অনুর্ধ্ব-১৭ দলে। ভাল ফলাফলের কারনে সুযোগ পেয়ে যান অনুর্ধ্ব ১৯ দলে। সে সময় তার বোলিং কোচ এন্ডি রবার্টসের সান্নিধ্যে এসে শিখে নেন আরো নতুন কিছু কৌশল। এরপরই সিনিয়র ডিভিশনে খেলা ছাড়াই জাতীয় দলের বিপক্ষে ‘এ’ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে যান মাশরাফি ।

বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে একটিমাত্র ম্যাচ খেলেই মাশরাফি জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ৮ নভেম্বর, ২০০১ এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। একই ম্যাচে খালেদ মাহমুদেরও অভিষেক হয়। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। মজার ব্যাপার হল, মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। তিনি এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয়। একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সাথে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সাথে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২টি উইকেট।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এর ফলে তিনি প্রায় দু’বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। ইংল্যন্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলায় তিনি সফলতা পান। ৬০ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এযাত্রায় তিনি প্রায় বছরখানেক মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।

২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়কে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে আউট করে তিনি স্বরুপে ফেরার ঘোষণা দেন। সেই সিরিজে তিনি ধারাবাহিকভাবে বোলিং করেন এবং তেন্ডুলকর ও গাঙ্গুলীকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন। তবে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনি উইকেট পাননি। এই সিরিজের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।
২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি ভালো বল করেন। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে তার গড় ছিল সবচেয়ে ভাল। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাটকীয় জয়ে তিনি অবদান রাখেন। তিনি মারকুটে ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে শূন্য রানে আউট করেন এবং দশ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দেন।

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে ভালো পেস বোলারের ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশে মোহাম্মদ রফিকের মত আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোন পেস বোলার ছিল না। মাশরাফি বাংলাদেশের সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন
২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তিনি এসময় ৪৯ টি উইকেট নিয়েছেন।

২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে মর্তুজা ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ৩৮ রানে ৪ উইকেট দখল করেন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি খেলায় নিউজিল্যান্ডের সাথে বিজয়েও মাশরাফির ভূমিকা রয়েছে।

মাশরাফি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গতির বোলার এবং সমর্থকদের কাছে “নড়াইল এক্সপ্রেস” নামে পরিচিত। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। চোটই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। ২০১৬ সালের রকেট বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় খেলায় ২ উইকেট সংগ্রহের মাধ্যমে মোট ২১৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী হিসাবে তুলে ধরেন নিজেকে।
অভিষেকের প্রায় ৮ বছর পর ২০০৯ সালে ক্যারিবিয়ান সফরে প্রথমবারের মতোন নেতৃত্বের দায়িত্ব কৌশিকের চওড়া কাঁধে। হ্যাঁ, একজন কৌশিক, সাকিব তামিমদের কাছে তিনি শুধুই কৌশিকভাই। কিন্তু বিধিবাম, প্রথম টেস্টেই পেলেন চোট, তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সাকিবের কাঁধে তুলে দেওয়া হলো দলের দায়িত্ব। বড়ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে দলকে জয়ের বন্দরেই নিয়ে গেছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার।
এরপরের বছর আবারো দলের নেতা হিসেবেই জাতীয় দলে ফিরলেন। এবার টানা ৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিলেন, তাতে জয় ৩ ম্যাচে। আবারো ধাক্কা, ইঞ্জুরির জন্য ছিটকে গেলেন দলের বাইরে। যার ভয়াল থাবায় খেলতে পারলেন না ঘরের মাঠের বিশ্বকাপেও। অথচ নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টায় কোন কমতিই রাখেন নি, এক মাসে কমিয়েছিলেন ১২ কেজি। এত কিছুর পরেও ২০১১ তে মাশরাফির স্মৃতি জুড়ে থাকবে তার সেই কান্না, বিশ্বকাপে দলে জায়গা পেলেন না, মিরপুরের বাইশগজ ছাড়লেন কাঁদতে কাঁদতে। মাশরাফির গল্প হয়তো সেখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু হয় নি, কারন ঐ যে হার না মানার জেদ, ইঞ্জুরির বাধা টপকে বল হাতে ছুঁটে চলা। মনের মধ্যেই শুধুই একটাই সংকল্প, দৌড়া! মাশরাফি, কলার টা উঁচু করে দৌড়া!
২০১৪ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তখন ক্রান্তিলগ্ন, একেরপর এক হার। ক্রিকেটারদের ফর্ম নেই, অথচ ক’মাস পরেই বিশ্বকাপ। এমনই এক সময়ে তৃতীয়বারের মতোন দলের দায়িত্ব টা তুলে নিলেন কাঁধে। তারপরের গল্প টা শুধুই জয়ের। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল, এই সেরা হওয়ার নৈপথ্যের মানুষ টা একজন মাশরাফি বিন মোর্ত্তাজা।
নিজের প্রথম এসাইনমেন্টেই সফল। জিম্বাবুয়ে সিরিজ জিতে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতোন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ। ভারতের সাথে সেই ম্যাচে স্রেফ দুর্নীতির কারনে না হারলে বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে পৌছাতো কে’ বা জানে।
এরপর ঘরের মাঠে টানা ৩ সিরিজ জয়, যার শুরুটা পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে। এরপর ভারত আর দঃ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জয়। বিশ্ব ক্রিকেট নড়েচড়ে বসলো, এসেছে নতুন পরাশক্তি যার সেনাপতি একজন হার না মানা গ্লাডিয়েটর। একজন যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে যিনি অনুপ্রেরণা নেন, ইঞ্জুরি, লোকের কটু কথা কিছুই যাকে আঁটকে রাখতে পারে না।
দুইবছর পর ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, নিউজল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোন বড় টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেললো বাংলাদেশ। সেদিনের ম্যাচের নায়ক, সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর আড়ালের নায়ক? সে ত ঐ দলেরই নেতা। রিয়াদকে দলে নিতে এক প্রকার যুদ্ধই করতে হয়েছে। অধিনায়কের মান রেখেছে রিয়াদ, ঐ মুহুর্তে ম্যাশের চেয়ে আর খুশি থাকতে পারে কেউ?

মাশরাফির অধীনে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স রয়েছে আরো, দুটি এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল খেলিয়েছেন দলকে, টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের দলকে এই ফরমেটেও সেরা হতে শিখিয়েছিলেন। এরকম একজন অধিনায়ক শিরোপা যারা অবসরে যাবে এমনটা মনে হয় চান নি বিধাতাও, ঠিকই প্রথমবারের মতোন বাংলাদেশের হাতে উঠেছে কোন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার শিরোপা মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার হাত ধরে। এশিয়া কাপে তামিমের এক হাতের বীরত্ব ক্রিকেট বিশ্ব মনে রাখবে সারাজীবন, কিন্তু ঐ লড়াইয়ে সাহস যুগিয়েছিলেন একজন মাশরাফি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে রিয়াদের সেঞ্চুরিতে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ, সেই রিয়াদকে দলে রাখার পিছনে যুদ্ধ করেছেন একজন মাশরাফি। তাসকিন, লিটন, মুস্তাফিজ, সৌম্যরা ফর্মে নাই, কাঁধে হাত দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন বড়ভাই মাশরাফি। অনেক চেষ্টা করেও যেনো লিটনের সেঞ্চুরি টা হচ্ছিলো না, প্রথমবারের মতন এশিয়া কাপের ফাইনালে পেলেন আরাধ্যের সেঞ্চুরি, ডেসিংরুম থেকে বুকে হাত দিয়ে ইনিংস বড় করার জন্য উৎসাহ দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। ডেসিংরুমে কখনো অধিনায়ক মাশরাফি, কখনোবা বড়ভাই মাশরাফি, বন্ধু মাশরাফিকেও
চিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বেশ। একই মানুষের নানা সত্ত্বা, পুরোটাই দলের জন্য, দেশের জন্য, ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য লড়াই।
মাশরাফি নাকি শুধুই অধিনায়ক হিসেবে দলে টিকে আছেন। নিন্দুকদের এমন কথার পিছনে অবশ্য কোন যৌক্তিকতা নেই, স্রেফ ২০১৯ এর বিশ্বকাপ বাদে রংহীন মাশরাফি ছিলোই বা কবে?
ইতিহাসের পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব নিয়ে ১০০ র অধিক উইকেট নেওয়া পঞ্চম বোলার এই মাশরাফি। ২০১৫ থেকে ২০২০, এই পাঁচ বছরে ওয়ানডেতে দলের হয়ে উইকেটের হিসাবে দ্বিতীয়, বিশ্বকাপে ফ্যাকাসে না থাকলে হয়তো বা থাকতেন প্রথম হয়েই, তবে তাতে মাশরাফির গ্রেটনেস কমবে কেনো? মাশরাফি মানেই ত এক মহীরুহ, যার শীতল ছায়ায় বেঁচে থাকার আশ্বাস পায় বাংলার ক্রিকেট।
এবার একটু পরিসংখ্যানে আসা যাক, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। নেতৃত্বের ভার নিয়ে ওয়ানডেতে ৮৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১০১ উইকেট। এই ৮৮ ম্যাচে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন ৫০ বার। একমাত্র বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবেও বিজয়ের অর্ধশতক করার কীর্তি শুধুই নেতা মাশরাফির। ৫৬.৮১% জেতার হারও স্রেফ ইর্ষণীয়।
আর ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবেও পেয়েছেন সর্বাধিক জয়ের রেকর্ড। ১১৭ টা আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৬১ জয়, বল হাতে কখনো বিপক্ষের টুঁটি চেপে ধরেছেন ত ব্যাট হাতে শেষে নেমে কখনো বাইশগজে ফুটিয়েছেন শিল্পের পসরা, মাশরাফি এমনই একজন।

একটু ক্রিকেটার মাশরাফির গল্প জানা যাক,
বাংলাদেশের হয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে ৫২৪ ম্যাচে ৭০১ উইকেট শুধুই মাশরাফির। এর মধ্যে প্রথম শ্রেনীর ম্যাচে ৫৭ ম্যাচে ১৩৫, লিস্ট ‘এ’ তে ৩০৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৪২০ উইকেট। বাকি ১৪৬ উইকেট এসেছে টি-টোয়েন্টিতে। সব মিলিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে ৭০১ উইকেট। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট নিয়েছেন ৩৯০ উইকেট। সাদা পোষাকে ৩৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৭৬ টা উইকেটে, ওয়ানডেতে ২২০ ম্যাচে ২৭০ আর টি-টোয়েন্টিতে ৫৪ ম্যাচে শিকার করেছেন মোট ৪২ উইকেট। বোলার হিসেবে কি একদম বাজে? নাকি অনেক বোলারের জন্যই যে পরিসংখ্যান শুধুই স্বপ্ন!

আর ব্যাটসম্যান মাশরাফির পরিসংখ্যান জানার আগে তার সম্পর্কে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবেই খ্যাত তারই সতীর্থ সাকিব আল হাসানের একটা কথা জেনে যান,
“বোলার কৌশিক ভাইয়ের কথা বাদ দেন। ব্যাটসম্যান মাশরাফির কথা ভাবেন শুধু। বাংলাদেশের হয়ে কত রান করেছেন উনি? হাজার দেড়েক। এই দেড় হাজার রান দিয়ে উনি বাংলাদেশকে যে কয়টা ম্যাচ জিতিয়েছেন, তা আমরা তিন-চার হাজার রান করে করতে পারিনি। ওনার ১৫ রান মানেই ম্যাচে আমরা এগিয়ে গেলাম!
আসলে মাশরাফিকে কে মাপতে হলে পরিসংখ্যানের হিসাব টা একপাশে চাপিয়ে রাখতে হবে৷ ৭০০ উইকেট কিংবা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর হিসেবটাও ভুলে থাকা যায়। মাশরাফি মানে একটা যোদ্ধার গল্প। যে গল্পে কখনো এসেছে জয় কখনো বা পরাজয়। কিন্তু ছিলো না কোন হার মানার গল্প!
মাশরাফি মানে কখনো নেতা, কখনো বা হার না মানা একজন যোদ্ধা। বিরেন্দ্রর শেবাগ,অ্যাডাম গ্রিলক্রিষ্টদের স্ট্যাম্প উপরে দেওয়া একজন দুরন্ত কৌশিক।
বিদায়ী ম্যাচে সিলেটে বেজেছিলো যেনো বিউগুলের সুর, যার ছোঁয়ায় আবেগী হয়ে উঠেছিলো ক্রিকেট পাড়া। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পঞ্চপান্ডব হিসেবে খ্যাত পাঁচজনের একজন ছিলো না কাল। নিষেধাজ্ঞার জন্য বাইশ গজে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। অথচ, ম্যাচ শেষে মাশরাফির কন্ঠে, ভাইকে মিস করার দুঃখ, “আমি সাকিবকে মিস করছি, এই ছেলেটা সবসময়ই আমার সাথে ছিলো।” বলার সময় যেনো অধিনায়কের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।
আর বড়ভাই কিংবা অধিনায়কের বিদায়ে সাকিব তার ফেসবুক পাতায় বললেন, ” সত্যিকারের নেতা এবং যোদ্ধা বলতে যা বোঝায় আপনি আমাদের কাছে তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন সব সময়। বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, আপনি শিখিয়েছেন নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে। আপনার থেকেই শিখেছি গৌরব আর সম্মানের সাথে দেশের জার্সি পরে কীভাবে মাঠে লড়তে হয়। নিঃসন্দেহে আমরা দারুণ কিছু সময় কাটিয়েছি মাঠে, কাটাবো সামনের দিনগুলোতেও। নিজের উদ্যমে যেভাবে আমাদের প্রেরণা দিয়েছেন আর প্রতিটা মুহূর্ত পাশে থেকে দল হিসেবে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার ব্যাপারটা ভুলবো না কখনোই। বিনয় আর সম্মানের সাথে টিম টাইগার্স আর প্রিয় জাতীয় পতাকাকে বিশ্বের বুকে উঁচিয়ে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। হয়তো আমাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন কিন্তু আমাদের সবার প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’ হয়ে সারাটা জীবন থাকবেন আমাদেরই মাঝে। সব সময়ই যেন আমাদের জন্য আপনার সেরাটা দিতে পারেন এই শুভকামনা জানাচ্ছি। “

তামিম বললেন, “সে আমাদের খাদের কিনারা থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। সে আমাদের সবসময়ই সাপোর্ট দিয়েছে। অনেক সময় আমার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বর্তমানে এই জায়গায় আসার পিছনেও বড় কারন তিনি। মাশরাফিকে ভুলবে না কেউ। “
মুশফিক বলেন, ” সত্যি বলেন সে একজন কিংবদন্তি। শুধু ক্রিকেটার হিসেবেই না, তিনি একজন গ্রেট মানুষও। হয়তো সে অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন, তবে ক্রিকেটার হিসেবে সে এখনো আছেন আমাদের সাথে। আমরা তাকে অধিনায়ক হিসেবে মিস করবো। সে আরো কয়েক বছির আমাদের সাথে খেলতে পারুক, এটাই আমার কামনা৷
রিয়াদ বলেন, ” একজন অধিনায়ক, ভাই কিংবা বন্ধু, সে সবসময়ই আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে৷ সে অবিশ্বাস্য। আমরা তাকে অধিনায়ক হিসেবে মিস করবো। “
ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিনটা আলাদা দশকের বিভিন্ন সময়ে দলের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বিদায় বেলায় সেই তিনিই সতীর্থদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়ছেন। যে তামিমের কাঁধে হাত দিয়ে সাহস যুগিয়েছেন অজস্রবার, বিদায়বেলায় সেই তামিমই কাঁধে তুলে নিয়েছে তার বড়ভাইকে, তার অধিনায়ককে। ঘুরিয়েছেন কাধেঁ করে পুরো মাঠ। পেয়েছেন গ্যালারি থেকে হাজারো করতালি।
বাইশ গজের সবার গায়ে মাশরাফি লেখা জার্সি, এক মাশরাফিতে হাজারো অনুপ্রেনার ছোঁয়া!
রুপকথায় ফিনিক্স কে জানতাম, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের পিছনেও আছেন একজন ফিনিক্স। তিনি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা।
