দেশ আগামী ১ জুলাই থেকে মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হবে। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের হাতে থাকা মোবাইল বন্ধ হবে না। তবে নতুন কেনার ক্ষেত্রে যাচাই করে কিনতে হবে। কারণ অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধ, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানো ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে গত ১ জুলাই, বৃহস্পতিবার থেকে মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই কার্যক্রম শুরু করেছে টেলিকম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গ্রাহকেরা এখন যেসব মোবাইল ব্যবহার করছেন, সেগুলো ৩০ জুনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে।
বিটিআরসি মোবাইল বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নামের এ ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। প্রযুক্তিগত সমাধান পেতে সংস্থাটি সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত নভেম্বরে চুক্তি করে।
আগামী ১ জুলাই এ পরীক্ষামূলক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবস্থাটি চালানো হবে। গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ সেট ব্যবহার করতে পারবেন না। চুরি করা সেট ব্যবহার করা যাবে না। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা বাড়বে।
মোবাইল ফোন নিবন্ধন যেভাবে
বিটিআরসি জানিয়েছে, এনইআইআরের কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও সিম নম্বরের সঙ্গে ব্যবহৃত মোবাইলের আইএমইআই সম্পৃক্ত করে নিবন্ধন করা হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন যেসব মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে, তা প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে সচল করে এনইআইআরের মাধ্যমে বৈধতা যাচাই করা হবে। বৈধ হলে মোবাইল ফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে নেটওয়ার্কে সচল থাকবে।
বিটিআরসি বলছে, যেসব মোবাইল বৈধ নয়, সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদে বার্তা বা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এরপর পরীক্ষাকালীন তিন মাসের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফোন কেনার আগে করণীয়
মোবাইল কেনার আগে করণীয় কী, তা–ও জানিয়েছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, ১ জুলাই থেকে যেকোনো মাধ্যম (বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয়কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) থেকে মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই ও রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।
বৈধ কি না তা যাচাইয়ের পদ্ধতি হলো মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<space>১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখুন। ১৬০০২ নম্বরে পাঠান। ফিরতি খুদে বার্তায় বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। নিচের ছবিতে তা দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিদেশ থেকে মোবাইল আনলে
বিটিআরসি জানিয়েছে, বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য বা দলিল জমা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন করলে মোবাইল ফোনটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। নিবন্ধন না করলে মোবাইল বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল নিবন্ধনের পদ্ধতি
neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন। Special Registration সেকশনে গিয়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরটি দিন। প্রয়োজনীয় নথির ছবি বা স্ক্যান করা অনুলিপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা বা ইমিগ্রেশনের তথ্যাদি, ক্রয় রসিদ ইত্যাদি) আপলোড করুন ও সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
মোবাইল ফোনটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে খুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় শেষ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের গিয়েও এ–বিষয়ক সেবা নেওয়া যাবে।
বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ দুটি ও শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি মোবাইল সেট সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।
নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া
নিজের মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই করুন
গ্রাহকেরা এখন যেসব ফোন ব্যবহার করছেন, তার বর্তমান অবস্থা যাচাই করতে পারবেন। মোবাইল থেকে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করুন। মোবাইল ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা Status Check অপশন বাছাই করুন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি বক্স আসবে, যেখানে মোবাইল সেটের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি লিখে পাঠাতে হবে। এরপর হ্যাঁ বা না অপশনসংবলিত একটি অটোমেটিক বক্স এলে হ্যাঁ বাছাই করে নিশ্চিত করুন। ফিরতি খুদে বার্তার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।
neir.btrc.gov.bd লিংকের মাধ্যমে বিদ্যমান সিটিজেন পোর্টাল অথবা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়েও এসব সেবা নেওয়া যাবে।
বিটিআরসি বলছে, এনইআইআর সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে সংস্থাটির হেল্প ডেস্ক নম্বর ১০০ অথবা মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার নম্বর ১২১–এ ডায়াল করে এবং অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে জানা যাবে। তবে এসব ব্যবস্থা চালু হবে ৩০ জুনের পর।
বিটিআরসি থেকে যা জানিয়েছে
বিটিআরসি জানিয়েছে, ১ জুলাই, ২০২১ থেকে অবশ্যই মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই করে কিনতে হবে এবং ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে এনইআইআর ব্যবস্থা চলাকালে তিন মাস নিবন্ধন বাতিল ছাড়া একজন ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ফোন আরেক জনকে দিয়ে দেওয়া ও বিক্রি করতে পারবেন। একজন গ্রাহক নিজের নামে নিবন্ধন করা যেকোনো সিম দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। পরীক্ষামূলক সময় পেরোনোর পর নিবন্ধন বাতিল বা ডি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিটিআরসির তথ্য অনুসারে, বিদেশ থেকে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে সচল হয়ে যাবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য বা ডকুমেন্ট জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে ব্যবহারকারীদের কাছে টেক্সট বার্তা পাঠানো হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে মোবাইল ফোনটি বৈধ বলে বিবেচিত হবে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, বিদেশ থেকে আসার সময় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি মোবাইল ফোন শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনতে পারেন। শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারেন আরও ছয়টি মোবাইল ফোন।
সরকার বর্তমানে আমদানি করা স্মার্টফোনে ৫৭ শতাংশ এবং বেসিক ও ফিচার ফোনে ৩২ শতাংশ কর আরোপ করছে। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্মার্টফোন ও ফিচার ফোনের কর যথাক্রমে ১৮ ও ১৩ শতাংশ।
মোবাইল শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা। ফলে সরকারকে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হয়েছে।
বিটিআরসির মতে, মে’র শেষে দেশে মোবাইল ফোনের মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১৭ দশমিক পাঁচ কোটিতে পৌঁছেছে।
আরো পড়ুন,
আপনার কম্পিউটারে উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করা যাবে তো?
ফ্রি গেমের পিছনে হ্যাকারদের ক্রিপ্টোমাইনিং ফাঁদ!
বাজেট দারুণ অপশন রিয়েলমি সি২৫এস
৫জি এসএ-কমপ্যাটিবল ই-সিম নিয়ে একধাপ এগিয়ে অপো
