তথ্যপ্রযুক্তির জগতে জাদুময় আকর্ষণীয় গুগলের অনন্য একটি ফিচার গুগল ম্যাপ। মাত্র এক দশক আগেও অচেনা কোথাও যেতে হলে দশজনকে জিজ্ঞেস করে রাস্তাঘাট চিনে তারপর রওনা দিতে হতো। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি ও গুগল ম্যাপের কল্যাণে পৃথিবীর কোনো প্রান্ত এখন আর অচেনা নেই! যেখানেই যাওয়ার ইচ্ছা হোক না কেন, ম্যাপে সার্চ করলেই সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেবে পথ। প্রয়োজনীয় কতরকম ফিচার যুক্ত হচ্ছে দিনদিন!
যদি ম্যাপ দেখেই জেনে নেওয়া যায় কোন রাস্তায় জ্যাম আছে আর কোন রাস্তা ফাঁকা, তাহলে নিশ্চয়ই অনেক সময় বেঁচে যেত, তাই না? এ সুবিধা করে দিতেই গুগল ম্যাপ নিয়ে ২০০৭ সালে যুক্ত হয় লাইভ ট্রাফিক।
এ ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ম্যাপের মেনু থেকে ‘রিয়েল টাইম ট্রাফিক’-এ ক্লিক করে ‘ট্রাফিক’ অপশনে গিয়ে ‘লাইভ ট্রাফিক’ থেকে ‘টিপিক্যাল ট্রাফিক’ করে নিতে হবে। ট্রাফিক অপশনটি চালু হলে ম্যাপে রাস্তার ওপরে সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রং দেখতে পাবেন। সবুজ রং দেখা গেলে বুঝতে পারবেন সে রাস্তায় এখন জ্যাম নেই। কমলা রং দেখা গেলে মাঝারি জ্যাম আর লাল রং থাকলে বুঝে নিতে হবে কঠিন যানজট, সুতরাং খুব সহজেই যানজট এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোন রাস্তায় জ্যাম আর কোন রাস্তা ফাঁকা, গুগল এই কাজটা করে কিভাবে? দুনিয়ার সব গাড়ির সাথেই কি গুগুলের ট্র্যাকার লাগানো আছে? নাকি স্যাটেলাইট ক্যামেরার ছবিতে গুগোল রাস্তার ছবি দেখে জ্যাম বুঝতে পারে?
আসলে সারা দুনিয়ার সব গাড়িতে গুগলের ট্র্যাকার লাগানো নেই। আর স্যাটেলাইট ক্যামেরায় পুরা দুনিয়ার ছবি প্রতি সেকেন্ডে এলানাইসিস করে প্রতি সেকেন্ডে জ্যামের আপডেট দেওয়ার মত শক্তিশালী কম্পিউটার ও ডাটা এনালাইসিস সফটয়ার এই মুহূর্তে কারও কাছেই নেই। কারন এর জন্য অকল্পনীয় পরিমাণ ডাটা নিয়ে কাজ করতে হবে। গুগল এই কাজটা করে আপনার স্মার্ট ফোনের লোকেশন ব্যবহার করে। গুগল এ তথ্য বের করতে ‘ক্রাউড সোর্সড ডেটা’ ব্যবহার করে থাকে। কোন রাস্তার উপর কতগুলো স্মার্ট ফোন আছে, আর সেগুলো কি বেগে চলাচল করছে তা হিসেব করে গুগোল রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের ম্যাপ তৈরি করে। অর্থাৎ রাস্তায় যত মানুষ যানবাহনে চলাচল করছে, তাদের স্মার্টফোনে যদি লোকেশন সার্ভিস অন করা থাকে, তাহলে গুগল সেগুলো থেকে ট্রাফিকের ডেটা সংগ্রহ করে ইন্ডিকেটর তৈরি করে। এর মাধ্যমে গুগল রাস্তায় থাকা গাড়ির সংখ্যা, কত দ্রুত গাড়িগুলো চলছে, সেগুলো হিসাব করে জানিয়ে দেয় জ্যামের খবরাখবর।
সম্প্রতি গুগল ম্যাপস এর কৌশলটি প্রমাণ করতে অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন; বার্লিনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রেমী সিমন ওয়েকার্ট। একটি হ্যান্ড কার্ট ট্রলিতে একসাথে ৯৯টি স্মার্টফোন রাখেন তিনি। এই ফোনগুলোর প্রত্যেকটিতে চালু করেন গুগল ম্যাপ। এরপর বার্লিন শহরের বিভিন্ন জায়গায় ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকেন।
এক জায়গায় এতো ফোন থাকায় বিভ্রান্ত হয় গুগল ম্যাপ। ফলে ফাকা রাস্তাকেই ট্যাফিক জ্যাম মনে করে লাল মার্ক করে দিয়েছিল। অথচ রাস্তা পুরো ফাঁকাই ছিলো।
মজা করে গুগল ম্যাপকে বোকা বানানোর জন্য তিনি ব্যবহার করেন সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন। গুগল অবশ্য এই হ্যাক ধরতে পেরেছে, আর প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে । গুগল সেই পথচারিকে ধন্যবাদ দেয় । গুগল আরো বলে যে- ভারত, মিশর বা ইন্দোনেশিয়াতে তারা রাস্তার গাড়ি ও মোটরসাইকেলগুলোকে আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারে কিন্তু হ্যান্ড কার্ট সনাক্তকরার প্রতি কখনো দৃষ্টি দেয়নি। এখন থেকে তারা হ্যান্ড কার্ট বা ট্রলিকেও হিসেবে ধরবে।