রাথগামার এক নির্জন গ্রামে বালুর মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়েই ক্রিকেটকে ভালোবেসে ফেলেন লাসিথ মালিঙ্গা । তখন অবশ্য টেনিস বল দিয়েই ক্রিকেট খেলতেন তিনি। শ্রীলঙ্কায় যত ক্রিকেটার বের হয় তাদের সিংহভাগই আসে স্কুল ক্রিকেট থেকে কিন্তু মালিঙ্গার অস্বচ্ছল পরিবারের সেসব স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শৈশবে স্কুল ক্রিকেটের অংশ হতে পারেননি তিনি। তবে বিদ্যালোকা কলেজে থাকাকালীন সৌভাগ্যক্রমে তিনি শ্রীলঙ্কার সাবেক পেসার চম্পাকা রামানায়েকের নজরে পড়ে যান।
সেই নজরে আসার মূল কারণ ছিল তার অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশন, পৃথিবীর অধিকাংশ পেসার যেখানে রাউন্ডআপ অ্যাকশনে বোলিং করেন, সেখানে মালিঙ্গা বোলিং করতেন ১৮০ ডিগ্রি কোণে হাত রেখে। টেনিস বলে খেলতে গিয়েই অদ্ভুতুড়ে এক অ্যাকশন আয়ত্ত্ব করেন তিনি। উইজেডেনের মতে, মালিঙ্গার এই অ্যাকশনের সাথে ক্রিকেটের স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের অনেক মিল আছে, আর এই কারণেই পরবর্তীতে মালিঙ্গার ডাকনাম হয়ে যায় “স্লিঙ্গা মালিঙ্গা”। এমন বিরল প্রজাতির এক পেসারকে পেয়ে সাথে সাথে লুফে নেন রামানায়েকে, মালিঙ্গাকে তিনি নিয়ে যান মাহিন্দা কলেজে এবং কলেজের মূল একাদশে খেলানোর সুযোগ করে দেন।
এই বোলিং অ্যাকশনের কারণে জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরেও পড়েন তিনি। তাই মাত্র ২১ বছর বয়সেই জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে তার।
অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনের মারারা ওভাল মাঠে ১-৩ জুলাই, ২০০৪ তারিখে অভিষেক ম্যাচটিতে ড্যারেন লেহম্যানকে দুইবার, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ড্যামিয়েন মার্টিন, শেন ওয়ার্ন এবং মাইকেল কাসপ্রোভিচসহ মোট ৬টি উইকেট নিয়ে দ্রুত
সফলতার মুখ দেখেন। খেলা শেষে তিনি অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের বন্ধুত্বসূলভ মনোভাব বিশেষ করে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের কাছ থেকে উচ্ছসিত সমর্থন পান।
তবে টেস্ট ক্রিকেটটাকে ঠিক উপভোগ করতে পারেননি মালিঙ্গা। ক্যারিয়ারে ৩০ টেস্ট খেলেই বিদায় জানান এই ফরম্যাটকে। স্বল্প সময়ের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১০১ টি উইকেট আছে তার।
টেস্ট ক্যারিয়ারটা সংক্ষিপ্ত হলেও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে গেছেন বহু বছর ধরে। ২০০৪ এ ডাম্বুলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে অভিষেক হওয়া মালিঙ্গা একদিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
এই ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ম্যাচ খেলেছেন ২২৬ টি। উইকেট নিয়েছেন ৩৩৮ টি। শ্রীলঙ্কার হয়ে ওডিআই তে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট মালিঙ্গার। প্রথম স্থানে মুরালিধরন মুরালিধরন ও দ্বিতীয় স্থান চামিন্ডা ভাস।
২৮ মার্চ, ২০০৭। সে বছরে হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে ক্রিকেট বিশ্বের নজর কাড়েন মালিঙ্গা। ঐদিন তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাট্রিকসহ পরপর চারটি বলে চারজন খেলোয়াড়কে আউট করেন। হ্যাট্রিকটি ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫ম, শ্রীলঙ্কা দলের জন্যে ৩য় এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪তম। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বোলার হিসেবে দ্বিতীয়বার ৪ বলে ৪ উইকেট নেন মালিঙ্গা। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটি হ্যাট্রিক করার রেকর্ডটি একমাত্র তার ।
অনেকক্ষণ মালিঙ্গার বোলিং কীর্তি নিয়ে কথা হলো। সে তুলনায় ব্যাটিং নিপুণতা সামান্য হলেও ওয়ানডেতে এখনো নবম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি লাসিথ মালিঙ্গা এবং এঞ্জেলো ম্যাথিউসের। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩৬ রানের জুটি করেছিলেন সেদিন এ দুজন।
টেস্ট, ওয়ানডে থেকে বিদায় নিলেও টি টুয়েন্টি ক্রিকেট এখনো খেলে যাচ্ছেন মালিঙ্গা। এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৮৩ টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ইতোমধ্যেই প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। টি-২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলারও তিনি। ক্যারিয়ারে নিয়েছেন ১০৭ টি উইকেট। আবার ২০১৪ টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও ছিলেন তিনি।
১৯৮৩ সালের আজকের দিনে (২৮ আগস্ট) শ্রীলঙ্কার গলের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে জন্মেছিলেন তিনি।
শুভ জন্মদিন লাসিথ মালিঙ্গা….
আরো পড়তে পারেন