শ্যাডো নিউজঃ আমাদের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিসেবে আমরা সবাই কামরুল হাসান কে চিনি। কিন্তু আমরা এটা কি জানি? এ পতাকা নকশা এর ক্ষেত্রে তার অবদান কতটুকু বা এই গেরিলাযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসই বা কে?
শিব নারায়ণ দাস বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে অজানা নাম, অপরিচিত মুখ। শিব নারায়ণ দাস জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি থানায়। শিবনারায়ণ দাসর পিতা সতীশচন্দ্র দাশ। তিনি কুমিল্লাতে আয়ূর্বেদ চিকিৎসা করতেন। শিবনারায়ণ দাস প্রথম ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে লাল বৃত্ত। পতাকার সবুজ রঙটি মুলত সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতিক এবং পতাকায় ব্যবহৃত লাল রঙটি হলো স্বাধীনতাযুদ্ধে আন্তোৎসর্গকারীদের প্রতিক। জাতীয় পতাকার রুপটি ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়েছিল।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে লাল-সবুজের ভিতর মানচিত্র খচিত পতাকা ব্যবহার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পতাকাটি সহজ করতেই পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেয়া হয়েছিলো। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটির সাথে জাপানের পতাকার মিল থাকলেও বাংলাদেশের পতাকায় সবুজ রঙের স্থলে জাপানিরা সাদা রঙ ব্যবহার করে থাকে।
১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রদের নিয়ে একটি কুচকাওয়াজের আয়োজন ছিলো। আয়োজনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। এ লক্ষে ছাত্রদের নিয়ে জয়বাংলা বাহিনী মতান্তরে ১৫ ফেব্রুয়ারি বাহিনী গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ লক্ষে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হকের ১১৭-১১৮ (তৎকালীন ১১৬) নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, নজরুল ইসলামসহ কুমিল্লা জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাশ।
২রা মার্চ, প্রথম পতাকা উত্তলন
বৈঠকে কাজী আরেফের প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনা শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সুর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কামরুল আলম খান তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারি দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনেন। এরপরে ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হলের ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই সংগ্রহ করেন এবং ট্রেসিং পেপারে পুর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রটি আঁকেন। ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাশ তার নিজ হাতে লাল বৃত্তের মাঝে মানচিত্রটি আঁকেন।
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিব নারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝে ব্যবহৃত মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ,রঙ এবং তার ব্যাখ্যা সম্বলিত পটুয়া কামরুল হাসানকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন। কামরুল হাসানের পরিমার্জিত রুপটিই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
পতাকার উভয় পাশে সঠিকভাবে মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলার অসুবিধা পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার কারণগুলো:

পতাকার মাঝে মানচিত্র আঁকার কারণ ব্যাখ্যা করে শিব নারায়ণ দাস বলেন, “পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা আলাদা করে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বোঝাতে মানচিত্রটি দেয়া হয় এবং স্বাধীনতার পরে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে সেটি সরিয়ে বর্তমান রূপ দেওয়া হয়।মানচিত্র সরানোর কারণ তুলে ধরে শিব নারায়ণ দাস তিনি আরো বলেন, “পতাকা সঠিকভাবে তুলে ধরা জাতির কর্তব্য। কিন্তু মানচিত্র থাকায় পতাকাটি আঁকা অনেক কঠিন এবং বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সহজ করে পতাকা আঁকার জন্য মানচিত্রটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।”
আজও যোগ্য সন্মান পাননি স্বাধীন বাংলার পতাকা ডিজাইনার শিব নারায়ণ দাস।
আরো পড়ুন,
মাস্টারদা সূর্যসেন – ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী বীর