দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে পাশে রয়েছেন সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় । প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে ফাইভজি চালুর প্রস্তুতিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭১ সালে ২৭শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়া। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে চলে যান তিনি। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে। সেখানকার নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন তিনি। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে সজীব ওয়াজেদ জয় একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের একটি মেয়ে আছে।
২০১৭ সালের ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান জয়ের নামকরণের ইতিহাস। জয়ের নামকরণের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওকে পেয়ে আমরা বন্দীখানার মধ্যে সজীবতা পেয়েছিলাম। তাই মা (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) নাম রেখেছিলেন সজীব। আর বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) রেখেছিলেন ‘জয়’। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের দিনই বঙ্গবন্ধু তার নাতির নাম ঠিক করে যান। তিনি বলেন, ‘সেদিন আব্বা বলেছিলেন, আমি থাকব কিনা জানি না, দেখতে পারব কিনা জানি না। তোর ছেলে হবে। সে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হবে। ছেলের নাম জয় রাখবি।
জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয় তাকে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ ২০১৯ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৭ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ ডিসেম্বর ‘রূপকল্প ২০২১’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইশতেহারে মূল স্লোগান ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় গত ১১ বছরে গড়ে ওঠা তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামোই এ কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে লাগছে বলে মনে করছেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে এখন ১৬ কোটি ২৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ১০ কোটি ১১ লক্ষ ৮৬ হাজার (গত এপ্রিল মাসের বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য মতে) মোবাইল ফোন গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মোবাইলে আর্থিক সেবা, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্সসহ বেশ কিছু সরকারি সেবা এখন হাতের নাগালে। এ ছাড়া আগামী বছরের প্রথমার্ধে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবা (ফাইভজি) চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা অ্যানালিসিস, ইন্টারনেট অব থিংকস, ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পা রাখবে বাংলাদেশ।
উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও সেবা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। আর এ যাত্রাকে এগিয়ে নিচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি। ৯৯৯’ হেল্পলাইন এটি এখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর, যেকোনো দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক সেবা প্রদান, সেবাটি দেশে একটি নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করছে। ৫৬টি মন্ত্রণালয়ের দুই হাজার ৮০০ সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য কাজ চলছে, ইতোমধ্যে ৬০০ সেবা অনলাইনে চলে এসেছে। সারাদেশে আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হয়েছে, দ্রুতই সকল প্রতিষ্ঠানকেই এর আওতায় আনা হবে। তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টাল। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য বাংলাদেশ।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে জরুরি সেবাসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে।
দেশ গঠনে তরুণদের মতামত, পরামর্শ শুনতে জয়ের ‘লেটস টক’ ও ‘পলিসি ক্যাফে’ দুটি প্রোগ্রাম ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি তরুণ উদ্যোক্তা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করতে তরুণদের বৃহত্তম প্ল্যাটফরম ‘ইয়াং বাংলার’ সূচনা করেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে থাকলে প্রতিবছর তার জন্মদিনে মা শেখ হাসিনা নিজে রান্না করে খাওয়ান তাকে। পাশাপাশি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কেক কেটে তার জন্মদিন পালন করা হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা সংক্রমনের কারনে মা-ছেলে দুইজন দু’দেশে। তাই স্ত্রী-সন্তানের সান্নিধ্য আর ফোনে মায়ের শুভেচ্ছায় এবার পালিত হবে আজ তাঁর ৫১তম জন্মদিন।
আরো পড়তে পারেন,
পদার্থবিজ্ঞানের একমাত্র প্রফেসর এমিরিটাসঃ অরুণ কুমার বসাক