বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত বায়োলজি, কম্পিউটার সাইন্স, স্ট্যাটিসস্টিক, ম্যাথম্যাটিক্স, ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কম্বাইন্ড সাবজেক্ট। গত বছর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাবজেক্টটি চালু করার অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করবে প্রথম ব্যাচ হিসেবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি অপেক্ষাকৃত নতুন একটা সাবজেক্ট। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
বিষয়টি কি?
বায়োইনফরম্যাটিকস ইঞ্জিনিয়ার জটিল জৈবিক তথ্য যেমন জিন সিকোয়েন্স এবং প্রোটিন শোষণ বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই ক্যারিয়ারে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্বগুলোর মধ্যে থাকবে বিশদ ডেটা বিশ্লেষণ করা, ডেটা ক্যোয়ারী বিকাশ করা এবং গবেষণাকাজে সেই ডেটা বিশ্লেষণ রিপোর্টকে কাজে লাগানো। বায়োইনফরম্যাটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান বা গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অন্তর্ভুক্ত থাকে। বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বিশ্লেষণ করার মত ইচ্ছা, গবেষণা করার স্পৃহা এবং বায়োসেন্সগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বায়োইনফরমেটিক্স কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প ও পরিবেশের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ। এ অনুষদ থেকে বিএসসি ইন এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিএসসি ইন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে দুটি ডিগ্রি দেয়া হয়। অনুষদের তৃতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ডিগ্রি হিসেবে ২০২০-২১ নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে বিএসসি ইন বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ডিগ্রিটি “কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি” অনুষদ থেকে দেয়া হবে। ৩০ জন শিক্ষার্থীকে এ ডিগ্রি প্রদানের জন্য ভর্তি করা হবে।
এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্যে পার্থক্য হল এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করবে মেকানাইজেশন নিয়ে আর বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করবেন কম্পিউটার বেজড সফটওয়্যার ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে কৃষি গবেষণাকে সহজীকরণ করতে।
কিভাবে হতে পারেন একজন বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার
বায়োইনফরম্যাটিকস ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য অবশ্যই ডাটাবেস বিকাশ এবং ডিজাইনের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। প্রোটিন এবং সিকোয়েন্স বিশ্লেষণের জন্য অ্যালগরিদম তৈরির অভিজ্ঞতাও প্রয়োজনীয়। প্রয়োজনীয় কিছু দক্ষতার মধ্যে বিশ্লেষণাত্মক, কম্পিউটার বিজ্ঞান, সমস্যা-সমাধান এবং যোগাযোগের দক্ষতা এবং পাশাপাশি প্রোগ্রামিংও জানতে হবে। কেননা কম্পিউটার বেজড সফটওয়্যার ও বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন তৈরি করতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রোগ্রামিং, কোডিং এবং গাণিতিক ধারণা থাকতে হবে।
উচ্চশিক্ষা
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ হিসেবে বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের উপর স্নাতক করার সুযোগ থাকছে। এছাড়া স্কলারশিপ নিয়ে বাহিরে বিভিন্ন দেশ যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের দেশগুলোতে উচ্চ শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে। থাকছে পিএইচডি করার সুযোগও।
ক্যারিয়ার হিসেবে বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
যেহেতু কম্পিউটার ও গণিতের উপর বিশেষ গুরুত্ব থাকবে এই বিষয়ে তাই এই সাবজেক্টে ক্যারিয়ার অনেক ভাল। একজন বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের এটুআই (এক্সেস টু ইন্টারনেট) প্রোগাম, কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আরো যে যে কারণে বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার ভাল হতে পারে-
- বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের মূল কাজ মূলত ডেটা স্টোর, পরিচালনা, ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণের জন্য সফটওয়্যার সরঞ্জাম তৈরি
- জিনগত যে মিউটেশনগুলো ঘটে বা হাইড্রোপ্যাথি শনাক্তকরণ মূলত একজন বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারই করতে পারেন
- ডিএনএ এর বিশ্লেষণ ও কম্পিউটার-বেজড অ্যালগরিদম তৈরিতে বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন রয়েছে।
- যেহেতু এই বিষয়টি নতুন, তাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগও রয়েছে।
একজন বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার কৃষিবিদ, বায়োইনফরমেটিক্স অ্যালালিস্ট, প্রোগ্রামার বা রিসার্চার, বায়োলজিস্ট বা বায়োটেকনোলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল ল্যাব টেক ইত্যাদি হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এছাড়া ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি পরমাণু গবেষণা ইন্সটিটিউট ইত্যাদিতে চাকুরী করার সুযোগ পেতে পারেন।