বাংলাদেশে হয়ে গেল স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা ‘স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২০’।
মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২০ যৌথভাবে আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব), ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এবং পাওয়ার্ড বাই ইজেনারেশন।
উক্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলজেন্স বা এআই ভিত্তিক উদ্যোগ ‘গেজ টেকনোলজিস’।
‘স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ’ বাংলাদেশ পর্বে প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্সআপ নির্বাচিত হয়েছে ‘অল্টারইয়্যুথ’ এবং ‘ট্রাক লাগবে?’ । চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ‘পোষাপেটস’ ও ‘কুকআপস’। শীর্ষ ৫ স্টার্টআপ সিলিকন ভ্যালি ঘুরে দেখার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে।
তাছাড়াও আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা আঞ্চলিক বিজয়ী হিসেবে গেজ টেকনোলজিস যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে স্মার্ট আপ ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২০ এর চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবে। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী উদ্যোগ পাবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ।
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ডকাপ বাংলাদেশ পর্যায়ে
বিজয়ীরা, বিচারকবৃন্দ ও অতিথিগণ
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের বাংলাদেশ পর্বে ১৫০ টির বেশি স্টার্টআপ আবেদন করে। আঞ্চলিক চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়ার জন্য সেরা ৮টি কোম্পানি নির্বাচিত করা হয়।
বিচারকদের মধ্যে ছিলেন কুয়েস্ট ভেঞ্চারসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার জেমস টান, ডেফটা পার্টনার্সের প্রিন্সিপাল মাসা ইসোনো, উইমেন ইন টেকের প্রতিষ্ঠাতা জেনি রিসকু এবং ওপেনস্পেস ভেঞ্চারসের পরিচালক আয়ান সিকোরা।
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফর ডাবল ডিজিট গ্রোথ’ শীর্ষক সেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বান্ধব ইকোসিস্টেম তৈরিতে ‘ভিশন ২০২৫’ উদ্বোধন করা হয়।
বিশ্বের বৃহত্তম স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের বাংলাদেশ অঞ্চলের চূড়ান্ত পর্বে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪টি বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বর্তমানের চেয়ে সাতগুন উন্নীত করা হবে।
বর্তমানে শুধুমাত্র একটি এক বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি (ইউনিকর্ন) রয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ৫টি বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের কোম্পানি অথবা ইউনিকর্ন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে এক দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম রয়েছে, যা ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব স্টার্টআপগুলো বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে দেড় লাখ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় সাত লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছে। ভিশন ২০২৫ এ ২০২৫ সাল নাগাদ প্রত্যক্ষভাবে ১০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি বলেন,”আমরা মুজিববর্ষ পালন করছি। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, যেখানে স্টার্টআপ খাতও জড়িত রয়েছে। আমি মনে করি স্টার্টআপ খাত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। বাঙালি উদ্ভাবনী জাতি, আমরা আজ যা ভাবি সেটি কাল বাস্তবায়ন করি। আমরা প্রত্যাশা করি, বেসরকারি খাতের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো। সেজন্য স্টার্টআপসহ বেসরকারি খাতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন,”সরকার এই খাতের জন্য নিজস্ব উদ্যোগ নিচ্ছে এবং এই খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে সফল স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে, যার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে বিলিয়ন ডলারের ইউনিকর্ন বিকাশ। বাংলাদেশে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিনিয়োগবান্ধব স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য এখানে ঘোষিত ভিশন ও লক্ষ্যমাত্রাকে স্বাগত জানাই।”
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আইসিটি ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “সরকার চাকরিজীবি নয়, চাকরিদাতা তৈরি করতে চায়। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা স্টার্টআপ কালচার, ইনোভেশন সেন্টার তৈরি করছি। আমরা স্টার্টআপ বাংলাদেশকে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছি এবং এই খাতের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। আমি স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ডকাপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী স্টার্টআপের সফলতা কামনা করছি।”
অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের চেয়ারম্যান, পেগাসাস টেক ভেঞ্চারস এর জেনারেল পার্টনার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিস উজ্জামান। তিনি বলেন,”পেগাগাস টেক ভেঞ্চারস বাংলাদেশ স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে বিনিয়োগ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা ইতিমধ্যেই সহজ ডটকম, আজকের ডিল, বাগডুম, হ্যান্ডিমামা ও ডিজিকনের উন্নয়নে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছি। আমরা বাংলাদেশ পর্বের বিজয়ীদের সিলিকন ভ্যালিতে নিয়ে যাবো, তাদের মেন্টরিং করবো এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের সাথে প্রতিযোগিতা করার উপযোগী করে তুলবো।”
আপনার মতামত দিন