সাবজেক্ট পরিচিতি
ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ECE) / ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং(ETE)/ ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং(APECE)
৩ টা সাবজেক্ট সম্পর্কে একসাথে লিখলাম – কারণ এদের মাঝে মিল অনেক। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এদের নাম আলাদা হলেও কোর কোর্স একই।
বিশ্বের অন্যতম পুরনো ও র্যঙ্কিং এ প্রথমদিকের ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট এর নাম বললে চলে আসে EEE- এর কথা। সেই EEE এর থেকেই ECE এর উৎপত্তি । আর ইটিই হল ETE এর এ একটা অংশ ।
ECE বিষয় নিয়ে বলি। এই বিষয়ের কোর কোর্স হল ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন । ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি । সমস্যা হয় কমিউনিকেশন এর বেপারটা মাথায় ঢুকে না। ECE এর কোর্স এ প্রথম দিকে থাকে ব্যপকভাবে ইলেকট্রনিক্স এর কোর্স। এক সময় কমিউনিকেশন এ প্রবেশ করবা। ইলেকট্রনিক্স এর জ্ঞান ছাড়া কমিউনিকেশন সম্ভব না।
একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে একজন কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের পার্থক্যটা হল ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাওয়ার রূপান্তর, উচ্চ ভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং, পাওয়ার প্লান্ট সুরক্ষা, পাওয়ার সিস্টেম নির্ভরযোগ্যতা, পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন এবং নিয়ন্ত্রণ এই কোর্সগুলো মেজর হিসেবে পড়তে হয়- যেটাকে কোর কোর্স বিবেচনা করা যেতে পারে । কিন্তু কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারদের কোর কোর্স হল কমিউনিকেশন।
তোমাকে কাজ করতে হবে কমউনিকেশন এর কথা চিন্তা করে । তবে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা ব্যপার না।
কেন পড়ব?
(ECE) হচ্ছে এমন একটি সাবজেক্ট যেখানে তুমি (EEE) ও (CSE) এর সম্মিলিত কোর্স পাচ্ছো তার মানে তোমার ইলেকট্রিক বেসিকও ক্লিয়ার হচ্ছে আবার কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সহ আরো বেশ কিছু নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছো তুমি। এই সাবজেক্ট এর আরেকটি সুবিধা হচ্ছে অনার্সের পর তুমি মাস্টার্স করতে গেলে (EEE) অথবা (CSE) যেকোনো একটি নিয়ে পড়তে পারবে। তাই এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যায় এটি একটি মজার সাবজেক্ট।
যেখানে পড়ানো হয়
বাংলাদেশে কুয়েটে ECE, রুয়েটে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ETE) , চুয়েটে ETE, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং(APECE) , খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ECE, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে APECE ও NSU te ETE ছাড়াও বেশ কিছু প্রাইভেট ও ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানও হয় ।
কি পড়ানো হয়
একজন ছাত্র ECE তে সাধারণত যে কোর্সগুলো পরে থাকে [কোর্সগুলোর নাম এ সামান্য বিভিন্নতা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে]-
১. অ্যানালগ ইলেকট্রনিক্স; ২. ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স; ৩. বৈদ্যুতিন মেশিন এবং পরিমাপ; ৪. বৈদ্যুতিক সার্কিট বিশ্লেষণ; ৫. ইঞ্জিনিয়ারিং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এবং অ্যান্টেনা থিওরি ৬. ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং পাওয়ার ইলেকট্রনিক্স; Radio. রেডিও এবং টেলিভিশন ইঞ্জিনিয়ারিং; ৭. উন্নত বৈদ্যুতিন সার্কিট; ৮. বৈদ্যুতিন ডিভাইস ৯. অপটিকাল ফাইবার যোগাযোগ; ১০. মাইক্রোওয়েভ এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ; ১১. ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং; ১২. বৈজ্ঞানিক, শিল্প ও জৈব মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্টেশন; ১৩. সিমিকন্ডাক্টর এবং ভিএলএসআই প্রযুক্তি;১৪. যোগাযোগ তত্ত্ব; ১৫. উন্নত যোগাযোগ তত্ত্ব; ১৬. কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং; ১৭. মোবাইল সেলুলার যোগাযোগ; ১৮. টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ১৯. মাল্টি মিডিয়া যোগাযোগ ২০. চিত্র প্রক্রিয়াজাতকরণ
এছাড়াও প্রোগ্রামিং সি / সি ++, মাইক্রোপ্রসেসর এবং অ্যাসেম্বলি ভাষা, মাইক্রো কন্ট্রোলার, ডেটা কমিউনিকেশন এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার পেরিফেরিয়াল এবং ইন্টারফেসিং, কম্পিউটার সংস্থা এবং আর্কিটেকচার, নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং অঙ্কন কোর্স গুলো করতে হয়।
এছাড়া মাইনর কোর্সগুলোর কথা না বললাম।
উচ্চশিক্ষা
[ইটিই / ইসিই / এপিসিই] থেকে উচ্চতর পড়াশোনা ইইই, সিএসইতে এমএস / পিএইচডি। মাইক্রোওয়েভ / উপগ্রহ কেন্দ্রিক যোগাযোগ, পারমাণবিক প্রকৌশল, রোবোটিকস, বায়োমেডিকাল ফিজিক্স, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স, নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি, মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্স, ন্যানো ইলেক্ট্রনিক্স, নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি
চাকুরী
পেশা নির্বাচনের সুযোগ:
- টেলিযোগাযোগ এবং মোবাইল সংস্থা
- উইম্যাক্স এবং ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি সংস্থাগুলি
- বাংলাদেশ রেডিও (রেডিও ইঞ্জিনিয়ার)
- বিসিএস টেলিকম ক্যাডার
- বিএইসি তে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
- বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিসিএসআইআর
- বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার (সহকারী প্রধান)
- পেট্রো বাংলা (সহকারী পরিচালক, ইলেকট্রনিক্স)
- সফ্টওয়্যার সংস্থা ও নেটওয়ার্কিং #
- বায়ো মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্টেশন ইঞ্জিনিয়ার
- সাধারণ ক্যাডার পরিষেবা, পিএসসি (বিসিএস)
- বিদেশে- টেলিকম এবং স্যাটেলাইট সেক্টরে যোগাযোগ প্রকৌশলী এবং ওয়্যারলেস যোগাযোগ, মাইক্রোওয়েভ ইঞ্জিনিয়ার।
এবার বেতন এর কথা একটু বলি। এটা আমার বলা লাগবেনা যে বাংলাদেশ এর যোগাযোগ সেক্টর কতটা পিছিয়ে। যখন এয়ারটেল থেকে বিটিসিএল এ ফোন করা হয় তখন ৫ বার নেটওয়ার্ক এরর হয়। এটা হবে না যদি ECE/ETE এর যথেষ্ট উন্নতি হয়। বাংলাদেশ এ রবি, গ্রামীনফোন, এয়ারটেল , বাংলালিঙ্ক এরা ECE দের recruit করা শুরু করেছে । একটা সময় সেটা খুব দ্রুত যখন এদের প্রচুর পরিমানে recruit করতে হবে। 3G এর জন্যই দেখা যাবে আরও নতুন নতুন পোস্ট খোলা হচ্ছে। এছাড়া উইম্যাক্স কোম্পানি গুলো ECE/ETE/APECE
গ্রাজুয়েট দের জব অফার করে থাকে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার / নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। তবে যদি একটু বাহিরের দিক টাকাই তাহলে আমার না বললেও চলবে। ভারতেই এখন ECE এর চাহিদা কল্পনাতীত । সেখানে সরকারি ইঞ্জিনিয়ার কোটাতেও ECE ছাত্ররা কোটা পায়। UK তে একজন কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার এর বেতনের হিসাবটা এরকম- [http://www.prospects.ac.uk]
- নতুন যোগ্য স্নাতক প্রশিক্ষণার্থী ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন শুরু হচ্ছে: £22,000 – £ 27,000
- Senior যোগ্য যোগাযোগ ইঞ্জিনিয়াররা 35,000 ডলার থেকে 45,000 ডলার আয় করতে পারে
- আরও সিনিয়র ইঞ্জিনিয়াররা 40,000 ডলার থেকে 55,000 ডলার আয় করে।
- Engine অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা £ 60,000 এর বেশি উপার্জন করতে পারবেন। বেনিফিটগুলি নিয়োগকর্তাদের মধ্যে পৃথক হয় এবং এতে শেয়ার-সম্পর্কিত বেনিফিট বা লাভ-ভাগের পরিকল্পনা, ছাড়যুক্ত পণ্য এবং একটি কোম্পানির পেনশন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এছাড়া জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া তে উচ্চ শিক্ষার যেমন ভাল সুযোগ আচ্ছে তেমন রয়েছে চাকরির সুবিধাও ।
পরিশেষে
এসব কিছুই তোমার সম্ভব- যদি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে সেখান থেকে একটা ভাল CGPA ও দক্ষতা নিয়ে বের হতে পার। মেধা আছে বলেই বাংলাদেশর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেড়েছ । এখন সেই মেধাকে ঝালাই করার সময়। যোগ্যতা দিয়েই সব অর্জন করতে হয়। চাকরিটাও করতে হবে। তাই নিজের মেধাকে কাজে লাগাও- তোমাকে বলতে হবেনা আমি পাশ করে বসে আছি। যদি নিজের লেভেলটাকে আরেকটু উপরে নেয়া যায় তাহলে হয়ত এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যেখানের কথা চিন্তাও করনাই। তাই প্রথম থেকেই ভাল করে চেষ্টা করে যাও। ECE এর একটা কোর্স আরেকটার সাথে খুব রিলেটেড। তাই প্রত্যেক কোর্সের সময় সেটা ভালমত আয়ত্তে নিবে। যেকোন শিক্ষক এর কাছ থেকেই যা বুঝনা শিখে নিবে। কারণ শিখার সময় কিন্তু মূলত ৪ বছরই। এর পর প্রয়োগ করার।