শ্যাডো নিউজ: বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন মেডিকেল সার্ভিস সাইট ডক্টরোলা । যা একটি সফল স্টার্টআপ।প্রধানত রোগের ধরন ডক্টরোলার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করলে ওই রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিস্তারিত তালিকা দেখা যায়। আর সেই তালিকা থেকে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যাবে খুব সহজেই।
অনলাইনে চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ডক্টরোলা আরও সেবা দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত রোগীদের মতামত গ্রহণ করছে। ডক্টরোলা বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। তবে বিশেষ সেবার জন্য গ্রাহক হতে হয়।
বর্তমানে দেশের ৬২টি জেলায় তাদের সেবা চালু রয়েছে।চালু হওয়ার পর থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ এখানে থেকে সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও আছেন।
যেভাবে হয়েছিল শুরু:
ডক্টরোলা চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।যারা স্বাস্থ্যসেবা খাতে অত্যন্ত বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি,দারিদ্র বিমোচন এবং অন্তর্নিহিত ত্রুটিগুলি সমাধান করতে চেয়েছিল।গ্রামে বসবাসকারী লোকেরা সঠিক সময়ে সঠিক ডাক্তারকে খুঁজে পেতে প্রচুর সমস্যায় পড়ে।পরবর্তী সময়ে যখন প্রয়োজন হয় তখন সঠিক চিকিৎসা সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ডক্টরোলা ডটকম স্টার্টআপ প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হয়েছিল।এরপর ২০১৫ সালে পুরোদমে শুরু হয়ে যায় ডক্টরোলার কাজ। মূলত সারা দেশের মানুষকে সঠিক ডাক্তার খুঁজতে কাজ করা, অ্যাপয়েনমেন্ট নিশ্চিত করা এবং ফলোআপের জন্য সাহায্য করা—এ তিনটি বিষয়ে কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, সুদূরপ্রসারী কাজ এবং মানুষের প্রকৃত উপকার করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ডক্টরোলার কর্মীরা।
বাংলাদেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আরও সচেতন করতে ও চিকিৎসাসেবায় সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ডক্টরোলা গড়ে তোলা হয়েছিল।বিলম্ব মূলত রোগের লক্ষণ এবং পরিণতি সম্পর্কে যথাযথ সচেতনতার অভাবে পাশাপাশি সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকার কারণে।
ডক্টরোলা এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য ক্রমাগত সামগ্রী তৈরি এবং প্রচার করছে। তারা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলিতে মাসিক ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রচার চালায়। স্টার্টআপটির একটি খুব সক্রিয় ফেসবুক পৃষ্ঠা রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের লাইভ,ব্লগ এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়াগুলির মাধ্যমে যুক্ত করে।তাছাড়াও, তারা রেডিও প্রোগ্রামগুলির সাথেও সাইন আপ করেছেন যা শীঘ্রই তাদের নেটওয়ার্ক থেকে চিকিৎসকরা পরিচালনা করবেন।
নিকটস্থ স্থানে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের কাছে রোগীদের গাইড করা যাতে ঢাকার মতো বড় শহরগুলিতে ঝামেলা যাত্রা এড়ানো যায়।
২০১৫ সালে ডক্টরোলার যাত্রা শুরুর সময় ২০০ হাসপাতাল ও কয়েক হাজার চিকিৎসককে এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়েছিল।সংখ্যার পরিমাণ এখন আরও বেড়েছে।বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ৪০০ অধ্যাপক যুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন প্রায় আট হাজারের মতো।প্রায় পাঁচশো ওপর হাসপাতাল এবং ডায়াগনসিস সেন্টার সঙ্গে যুক্ত আছে।
যেভাবে ডক্টরোলা স্টার্টআপটি কার্যক্রম করে থাকে:
সাধারণত তিনভাবে এই অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়ার কার্যক্রম করা হয়—অনলাইনের মাধ্যমে, টেলিফোনের মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
১. অনলাইন:
Doctorola এই ওয়েবসাইটির মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায়। পাশাপাশি চিকিৎসকের তালিকাও দেওয়া থাকে।
রোগী সেখান থেকে চিকিৎসক বাছাই করে। তখন সেখানে চিকিৎসককে দেখানোর সম্ভাব্য সময়গুলো শো করে। তারপর রোগী তার প্রয়োজন অনুযায়ী সময় নির্বাচন করে। এরপর অ্যাপয়েনমেন্ট-সংক্রান্ত তথ্য যেমন:ডাক্তারের নাম, চেম্বারের ঠিকানা, তারিখ ও সময় ইত্যাদি মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে চলে যায়। এই রকম একটি মেসেজও চিকিৎসকের কাছে চলে যায়।
এর পর নির্দিষ্ট তারিখের একদিন আগে ফোনকলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় অ্যাপয়েনমেন্টের বিষয়ে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর রোগীর কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে জানা হয় সে গিয়েছিল কি না, ফলোআপ করতে বলা হয়েছে কি না, কেমন লেগেছে চিকিৎসকের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে।
২.ফোনকল:
এ ছাড়া অনলাইনে না পারলে সরাসরি ফোনকল করেও ফোনের মাধ্যমেও অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়া যাবে। ফোন নম্বর হলো : ০৯-৬০৬-৭০৭-৮০৮, মোবাইল : ০১৭৯০-৮৮৮৭৭৭।
৩.সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক:
এ ছাড়া ফেসবুকের http://Facebook.com/doctorolafans মাধ্যমেও অ্যাপয়েনমেন্টের কাজটি করা হয়। অ্যাপয়েনমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্নভাবে কাজ করে স্টার্টআপটি।
মূলত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যারা অসুস্থতার সময় যেকোনও সময় চাইলে ডাক্তার পান না, তারা ডক্টরোলা ব্লগ http://blog.doctorola.com কিংবা এর ফেসবুক পেজের সহায়তা নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ থেকে রোগীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় সবসময়। নিজের সমস্যার কথা জানালে ডক্টরোলায় নিযুক্ত ডাক্তার আপনাকে দেবে পরামর্শ।

বিখ্যাত ফোর্বস-এর প্রতিবেদনে ডক্টরোলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ডক্টরোলা স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত একটি প্রযুক্তি উদ্যোগ।যেটি ডিজিটাল মাধ্যমে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে সহায়তা করে রোগীকে।দেড় বছরে প্রতিষ্ঠানটি বেশ উন্নতি করেছে।পুরো বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা দিন দিন যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ডক্টরোলার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবেই চিকিৎসকের খোঁজ পাওয়া যাবে।
প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতই তাদের ফেসবুক পেজে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে ‘লাইভ’-এর আয়োজন করে। যেখানে আলোচক হিসেবে থাকেন বিভিন্ন রোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এতে বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক পরামর্শ পাওয়া যায়। ডক্টরোলা ভবিষ্যতে টেলিমেডিসিন সেবাও দিতে চায়।
ডক্টরোলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তিনি এই স্টার্টআপের একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা। ডক্টরোলার কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন,
‘চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যকার দূরত্ব কমাতে আমাদের প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া রেফারেল সিস্টেম নিয়েও এগোতে চাইছেন। একজন চিকিৎসক যাতে রোগীকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন। রোগী ও চিকিৎসকের প্রয়োজনে চিকিৎসার তথ্য সংরক্ষণের কাজ করছে ডক্টরোলা।

আপনার মতামত দিন