ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকারকে বলা হয় ‘লিটল মাস্টার’। কিন্তু তার আগে এই উপাধি দেওয়া হয়েছিল একজনকেই। তিনি হলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি হানিফ মোহাম্মদ। ৬২ বছর আগে আজকের এই দিনে(২৩ জানুয়ারি, ১৯৫৮) তিনি এ সম্মাননার দ্বার উন্মোচন করেছিলেন।
হানিফ মোহাম্মদ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বিখ্যাত ৩৩৭ ও ৪৯৯ রান এবং ৯৭০ মিনিট- এই তিনটি অংকের জন্য। প্রতিটিতে জড়িয়ে আছে ক্রিকেটীয় খ্যাতি, রোমাঞ্চ ও ইতিহাস।
১৯৫৮ সালে ব্রিজটাউন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৯৭০ মিনিট টানা ব্যাটিং করে নিশ্চিত পরাজয় থেকে পাকিস্তানকে বাঁচিয়েছিলেন হানিফ মোহাম্মদ। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩৩৭ রান করেছিলেন ওই ইনিংসেই। তার অসাধারণ ও দায়িত্বশীল ইনিংসে পাকিস্তান ছয় দিন লড়াই করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। টেস্টটি ড্র হয়েছিল। এ রান করতে হানিফ ১৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট ক্রিজে ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের ইনিংসও এটি। ১৮ জানুয়ারি ১৯৫৮ তে ব্যাট করতে নামা হানিফ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলার ডিএস এটকিনসনের শিকার হয়ে হানিফ মোহাম্মদ আউট হয়েছিলেন ২৩ জানুয়ারি অর্থাৎ আজকের এই দিনে।
এই ৬২ বছরে ওয়ানডে, টি টুয়েন্টির বিবর্তনে হানিফ মোহাম্মদের সে কীর্তি অনেকের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই। তবে ৩৩৭ রান করে ম্যাচ বানানো সে ইনিংসের পরই তাকে ‘লিটল মাস্টার’ উপাধি দেওয়া হয়। সে ম্যাচের স্কোরকার্ড।

ক্রিকেটের ইতিহাসে তখন পর্যন্ত ৫০০ রানের ইনিংস খেলেননি কেউই। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অপরাজিত ৪৫২ ছিল ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। হানিফ মোহাম্মদ শুধু সেটি ভাঙলেনই না, দাঁড়িয়ে গেলেন ইতিহাসের সামনে। তবে একই সাথে আফসোসেরও জন্ম দেন তিনি। ব্যক্তিগত ইনিংসের ৪৯৯ রানের মাথায় হানিফ হয়ে গেলেন রানআউট!
হানিফ না পারলেও ১৯৯৪ সালের ৬ জুন ব্রায়ান লারা ঠিকই ৫০১ রান করেছিলেন। এখন পর্যন্ত সেটিই একমাত্র পাঁচ শতাধিক রানের বিশ্ব রেকর্ড। হানিফ ৫০০ ছুঁতে না পারলেও ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন। কিন্তু লারার হাতে সেই রেকর্ডটিও ভেঙে যায় দীর্ঘ ৩৫ বছর টিকে থাকার পর।
১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি পাকিস্তানের কায়েদ ই আজম ট্রফিতে হানিফের ৪৯৯ রানের সেই ইনিংসে তিনি ব্যাট করেছিলেন ৬৩৫ মিনিট, চার মেরেছিলেন ৬৪ টি, কোনো ছক্কা ছিল না।
ক্যারিয়ারে ৫৫ টি টেস্ট খেলা এ ব্যাটসমান রান করেছেন প্রায় ৪ হাজার(৩৯১৫)। ভারতের জুনাগড়ে জন্মগ্রহন করা হানিফ মোহাম্মদ ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট ৮২ বছর বয়সে করাচিত মারা যান।