আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষামন্ত্রীও এর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি খসড়া নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও সমন্বিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই এখনো এই বিষয় চূড়ান্ত নয় যে, আদৌ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে কিনা। এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আর সেটা হচ্ছে সমন্বিত পরীক্ষায় বিইউপির অবস্থান। অর্থাৎ, বিইউপি সমন্বিত পরীক্ষায় যাবে কি যাবেনা!
বিইউপি যাবে কি যাবেনা এখনো তা বিইউপি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় নি।অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে কারণে সমন্বিত পরীক্ষায় যাওয়া উচিত হবে না। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
আমরা জানি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল,সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত দেশের একমাত্র এবং দেশের ২৯তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যা ২০০৮সালে প্রতিষ্ঠিত।বিইউপির গঠন কাঠামো অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বিইউপি সাধারণ মানুষের নিকট নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে বিইউপি নিজেকে কতো উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। শুরুতেই ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যার একটা তুলনা দেখাই, ২০১৮ তে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজারের কিছু বেশি অপরদিকে, সর্বশেষ অর্থাৎ ২০১৯ এর পরীক্ষায় সর্বমোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার। সংখ্যাটা যে আরও অনেক বেশী হতো যদি সাস্ট ও চবি এর পরীক্ষা একই সময়ে না থাকতো এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আর আপনাদের হয়তো জানা নাও থাকতে পারে, যে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিইউপি সবচেয়ে বেশি জিপিএ চায়। তারপরে বাছাই তো রয়েছেই। আর এতোকিছুর পরও একবছরের ব্যবধানে প্রায় দশ হাজার পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এই সংখ্যাটাই বলে দেয় বিইউপি সাধারণ মানুষের নিকট প্রতি নিয়ত কতটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
এবার আশা যাক পড়াশোনার মান। বিইউপির পড়াশোনার মান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। শুধু একটা জিনিস বলে রাখি, বিইউপির শিক্ষার্থীরা বর্তমানে আইবিএ শিক্ষার্থীদের সাথে সমানে সমানে লড়াই করছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাদের পিছনেও ফেলছে। দেশ- বিদেশের অনেক প্রতিযোগীতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। দিনদিন চাকরীর বাজারে নিজেদের আধিপত্য বাড়ছে। যদিও এখনো বিইউপি একদমই তরুণ। এখনো সব ডিপার্টমেন্ট থেকে ব্যাচ বের হয়নি। সবগুলো ব্যাচ যখন বের হবে এবং একাধিক ব্যাচ বের হবে তখন চাকরির বাজারে বিইউপির আধিপত্য কতটুকু হবে তা আলাদা করে বলার দরকার নাই। বিইউপিতে নেই কোন রাজনৈতিক চাপ, নেই কোন সহিংসতা, নেই কোন পিছুটান। রয়েছে সুন্দর পরিপাটি একটি ক্যাম্পাস যার সৌন্দর্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। সবকিছু মিলিয়ে বিইউপির অগ্রযাত্রা আপন বেগে ছুটে চলেছে এবং সবকিছু মিলিয়ে সেদিন দূরে নয় যেদিন বিইউপি গোটা বিশ্বে নিজের একটি অবস্থান করে নিবে।

তবে বিইউপি যদি সমন্বিত পরীক্ষায় যায় বিইউপি তার স্বকীয়তা হারাবে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষ আর বিইউপিকে আলাদা করে দেখবেনা। বিইউপি অবশ্যই তার জৌলুস হারাবে। কারণ, বিইউপির ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি এবং এইটুকুও জানি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে সম্পূর্ণ অালাদা। যাতে করে বিইউপি তার যোগ্য শিক্ষার্থীদের বাছাইয়ের সুযোগ পায়। কিন্তু সমন্বিত পরীক্ষায় সেই সুযোগটা পাবেনা এবং পাবেনা সেরা শিক্ষার্থীদের যারা কিনা নিয়ে যাবে প্রিয় বিইউপিকে অনেকদূর-বহুদূর।
