৯৯৯ জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর।
যেকোনো বিপদে পড়লে, সাইবার অপরাধের শিকার হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়। মানুষের বিপদে সহায় হিসেবে যুক্ত হওয়া নতুন এই সেবা পরিচালিত হয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা
নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় জরুরি সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯। দুর্বৃত্ত আক্রান্ত নারী কিংবা প্রভাবশালীদের কবলে পড়া পুরোনো গাছ উদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে ৯৯৯। আশপাশ থেকে সচেতন নাগরিকদের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে। আবার উঁচু দালানের কার্নিশে আটকে পড়া বিড়াল। ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাণীকেও।
সহায়তার জন্য প্রসারিত হাত
দুর্ঘটনায় সহায়তা, বাল্যবিবাহ রোধ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯-এ তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন লাখো মানুষ। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পেয়েছেন মানুষ।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেবা চালু হয়। পুলিশের অধীনে পরিচালিত একটি জরুরি কল সেন্টার হলো ৯৯৯ জরুরি সেবা। এখান থেকে শুধু পুলিশ নয়, জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই সেবার জন্য ফোন করতে পারেন। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ সেবা। ৯৯৯–এ ফোন করতে কোনো খরচও নেই, এটি টোল ফ্রি।
৯৯৯’ থেকে যে যে সুবিধা পাওয়া যাবে:
সরকার সকল স্তরের জনগণকে নাগরিক সুবিধা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ; জাতির জন্যে এক বিরাট অর্জন। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৪১তম অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। তাই বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে ডিজিটালাজইড করছেন। এরই ধারাবাহিকতা ‘৯৯৯’ কোড এর মাধ্যমে ন্যাশলাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
‘৯৯৯ ইউনিট’ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস প্রদান করে যাচ্ছে।

৯৯৯ ইমারজেন্সি সার্ভিস থেকে কী কী সুবিধা পাবেন ?
এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। এমন প্রশ্নের উত্তর হলো…
১. পুলিশ সম্পর্কিত তাৎক্ষণিক যে কোনো সেবা।
২. ইমারজেন্সি এ্যাম্বুলেন্স সেবা।
৩. ইমারজেন্সি ফায়ারসার্ভিস সেবা।
উপরের তিনটি তথ্য ও সেবা পেতে আপনাকে যা যা করতে হবে…
১. যে কোনো মোবাইল নম্বর থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে পারবেন কিন্তু ল্যান্ডলাইন থেকে নয়।
২. বিপদের সময় সবচাইতে দ্রুত কার্যকরী একটি নির্দিস্ট সম্পূর্ণ টোল ফ্রি ফোন নাম্বার।
৩. দিন রাত ২৪ ঘন্টা ইমারজেন্সি সার্ভিস।
৪. সারা বাংলাদেশ জুড়ে সার্ভিস পাওয়া যাবে।
৫. ফায়ার সার্ভিস সাপোর্ট।
৬. পুলিশ নিরাপত্তা সাপোর্ট।
৭. দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স সাপোর্টসহ আরো অনেক সার্ভিস।
৯৯৯ থেকে তাৎক্ষণিক জরুরি সেবা পেতে আপনাকে যা করতে হবে:
সঠিক ঠিকানা প্রদান করা
১. জেলা বা উপজেলার নাম উল্লেখ করুন।
২. রাস্তা বা বাড়ির নাম উল্লেখ করুন।
৩. সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববর্তী কোন নির্দিষ্ট স্থানের নাম উল্লেখ করুন।
আপনার ফোন ট্র্যাক করে ৯৯৯ আপনার অবস্থান জানতে পারবে। কিন্তু তাদের কাজ আরো সহজ করতে আপনি আপনার নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে ভালোভাবে বলুন।
প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করা
১. কলের সময় শান্ত থাকুন
২. কোন ধরনের সেবা (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স) চাচ্ছেন তা পরিষ্কার করে বলুন।
৩. আপনার সমস্যা, বিশদভাবে আপনার ঘটনার বর্ণনা বিস্তারিত তুলে ধরুন।
৪. সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান।
আপনার সমস্যা শান্তভাবে তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। সমস্যার কথা আপনাকে তাদের কাছে কথা বলেই বুঝাতে হবে। অন্যকোনো উপায় যেহেতু আপনার কাছে নেই; তাই কথা বলার সময় শান্ত থাকুন। যতোটা সম্ভব আশেপাশের বিরক্তিকর শব্দ থেকে দূরে গিয়ে কথা বলুন।
সতর্কতা ও ধিরস্থির ভাবে জরুরি পরিস্থিতির তথ্য প্রদান
১. আপনি নিজে নাকি অন্য কেউ সমস্যায় পড়েছেন?
২. কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন।
৩. আপনার কোন ধরনের জরুরি সেবা প্রয়োজন, অ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা?
৪. আহত ব্যক্তির অবস্থা কততুকু খারাপ?
৫. তার চেতনা আছে কি?
৬. তিনি কি শ্বাস নিতে পারছেন?
৭. তার আম্বুলেন্সের দরকার আছে কিনা?
৮. কল না কেটে লাইনে থাকুন।
সমস্যা আপনার হলে আপনার নিজের তথ্য সঠিক ভাবে দিবেন। কিন্তু সমস্যা যদি অন্য কারো হয় তাহলে ৯৯৯ এ ফোন করার আগে সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিক তথ্য বিস্তারিত যেনে তারপর ফোন দিন।

কেমন চলছে বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে জরুরী টেলিফোন সেবা?
বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে প্রশিক্ষিত এজেন্টরা জরুরি ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশ কিংবা এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
এখানে যারা কল রিসিভ করেন তাদেরকে বলা হয় কল টেকার। তাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এখানে চারটি শিফটে কাজ করেন দু’শোর বেশি কর্মী।
কিন্তু এই সেবা প্রদানের উপযুক্ত অবকাঠামো কতটা আছে তাদের?
বর্তমানে একইসঙ্গে ৩৩টি সংযোগের মাধ্যমে কল নেয়া হচ্ছে। সামনে ১০০টি কল সংযোগ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলছেন কর্মকর্তারা।
তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নম্বরটি মোটামুটি পরিচিত হলেও নির্দিষ্টভাবে কি ধরনের সেবার জন্য এখানে ফোন করা যাবে তা জানেন না এখনো অনেকে।
ফলে মোবাইল সিম বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে কিংবা ডাক্তারি নানা পরামর্শের জন্য ফোনকলও আসছে অহরহ।
কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন এই হেল্প-ডেস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৫ হাজারের ওপরে ফোন কল এসেছে, যার মধ্যে ৬০ হাজারের মতো কলের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ সেবা প্রার্থীকে সেবা প্রদান সম্ভব হয়েছে এই হেল্পডেস্কের মাধ্যমে।
এর মধ্যে পুলিশি সেবার আবেদন ছিল সবচেয়ে বেশি ৫৫ শতাংশ।
এরপরেই ছিল ফায়ার সার্ভিসের জন্য ২৯% ফোনকল এবং তারপরে আছে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এর জন্য ফোন। যার জন্য গড়ে ১৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ফোন করেছেন।
মনে রাখবেন ৯৯৯ কে অযথা ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না। ভুল তথ্য প্রদান এবং বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে আপনার বিরুদ্ধে নেয়া হতে পারে আইনি ব্যবস্থা। তাই সবসময় প্রয়োজনে ফোন দিবেন।