পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের কল্যাণে ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী। সত্যি বলতে, দিন যতই যাচ্ছে আমরা যেন সবকিছুকেই একখানে আবদ্ধ করে ফেলছি। অথচ যাদেরকে নিয়ে সুখি থাকার কথা তাদের থেকে দিন দিন দুরে সরে যাচ্ছি, বিশেষ করে মা-বাবা কে একটা গণ্ডির মধ্যে আটকিয়ে রাখছি। বাবা-মা কে সবকিছুই দিচ্ছি, যেটা দিচ্ছিনা তা হল মানুষিক প্রশান্তি। আমরা তো নানা ভাবে আনন্দ নিয়ে থাকি, অনেকের সাথে মিশতে পারি ঘুরতে পারি। একবারও কি ভেবেছেন বাসায় মা-বাবার মনের অবস্থা কি?
আসুন মা-বাবাকে একটুখানি মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা করে দেই। প্রিয় মা-বাবা আর প্রবীণদের একটুখানি আনন্দ দেবার লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় সিনিয়র সিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট কেয়ার অফ বাংলাদেশ (Senior Citizen Entertainment Care Of Bangladesh; SCECB) যা আইডিয়া আইকন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের একটি সেবা মূলক আয়োজন। যাদের প্রত্যয়ই হলো আমার, আপনার সকলেরই মা-বাবা ও প্রবীণদের শৈশবে নিয়ে যাওয়া, তারুণ্যের উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলা; যেন তাঁরা সব সবসময় হাসি খুশি ও সুখে শান্তিতে থাকে।
সিনিয়র রিপোর্টার; মাছরাঙা টেলিভিশন
সিনিয়র সিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট কেয়ার অফ বাংলাদেশ (SCECB) এর কার্য পরিকল্পনা পুরো বাংলাদেশ জুড়ে, বর্তমানে কার্যক্রমের সূচনা বিভাগীয় শহর রংপুরে। এমন উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম যার কর্ণধার হলেন জনাব আসাদুজ্জামান আসাদ।
বিশেষ সেমিনারে বক্তৃতা রাখছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ
সংস্থাটির কথা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হক স্যারের সাথে। তিনি সংস্থাটির ভাবনা সম্পর্কে বলছিলেন, “সিনিয়র সিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট কেয়ার অফ বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব আসাদুজ্জামান আসাদ; যে আয়োজন করতে যাচ্ছেন, ‘প্রবীণ বাবা-মায়েদের মিলনমেলা’ আমি এটা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত। যিনি নিজের বাবাকে ভালোবাসেন, যিনি নিজের মাকে ভালোবাসেন, যিনি তার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, যার একটি সুন্দর ধারণা সারা বাংলাদেশে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি চান কোনো বৃদ্ধ বাবা-মা ই কোনোদিন বৃদ্ধাশ্রমে থাকবেন না।”
আরো বলেন, “আমরা যদি আজকে আমাদের বাবা–মার যত্ন করি তাহলে আমাদের সন্তানও আমাদের বাবা-মা, আমাদের যত্ন করবে। মনে রাখবেন একজন বাবা-মা চেয়েছেন বলেই, একজন বাবা-মা ছিল বলেই আমরা এ পৃথিবীতে আসতে পেরেছি। আমাদের বাবা-মা ছোটবেলায় যেভাবে আমাদের লালন পালন করেছেন, আমরাও যেন বাবা-মাকে সেভাবে বৃদ্ধ বয়সে আদর যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিই। কারণ আমরাও একদিন বৃদ্ধ হবো।”
“আরবিতে একটি কথা আছে, “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী ছগিরা” — ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার বাবা-মাকে সেরকম রাখেন তারা যেরকম আমাকে শিশু বয়সে লালন পালন করেছেন।’ আমরা বাবা-মাকে সম্মান করব, ভালোবাসব এবং এমনভাবে বাবা-মাকে খেদমত করার চেষ্টা করব যেন এই খেদমতের সহায়তায় আল্লাহ পাক আমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং আমরা বেহেশতবাসী হই। আল্লাহ পাক বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার পরে যদি কারো স্থান থাকে সেটা হচ্ছে বাবা-মা।”–বলছিলেন সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হক।
প্রতিটি সন্তানের সফল নায়ক হয়ে উঠার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন একজন বাবা ও একজন মা।
বাবা-মার প্রতি অবহেলার বেপারে আক্ষেপ করে বলেন, “আজকে আপনি আমি ভালো চাকরি করছি কিন্তু বাবা-মার খোঁজ রাখার সময় পাচ্ছি না। আমাদের সময়ের অভাবের কারণে তাদের সাথে একবার দিনে ফোনে কথাও বলতে পারি না। আমি সকলকে অনুরোধ করব আমরা যেন প্রতিদিন বাবা-মার খোঁজ নেই। আজকে আমরা বিরাট অট্টালিকায় থাকি কিন্তু বাবা-মাকে ভুলে যাই। আমি অনুরোধ করব সমাজে যারা বিত্তবান আছেন, যারা বাবা-মার খেদমত করার সুযোগ পেয়েছেন তারা যেন প্রত্যেকেই তাদের বাবা-মাকে সর্বোচ্চটা প্রদান করতে পারেন এমন প্রত্যাশা করছি।”
শেখ মাজেদুল হক স্যার তাই সবাইকে অনুরোধ করে বলছিলেন, “প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, শ্রদ্ধাভাজন সকল সহকর্মী, সকলকে আমি অনুরোধ করব যে আগামী দিনের যে বাংলাদেশ সে বাংলাদেশে কোনো বৃদ্ধাশ্রম হবে না। বৃদ্ধাশ্রমে কেউ থাকবে না। প্রত্যেক বাবা-মারই সবচাইতে বেশি অধিকার তার নিজ সন্তানের বাড়িতে থাকা, সবচাইতে বড় অধিকার সন্তানের বাসায় সবচাইতে সুস্বাদু খাবারটা খাওয়া। কারণ এই বাবা-মা অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা করেছেন বলেই আজকে এই আপনি, আমি আজকে এত বড় স্থানে আসতে পেরেছি। আমি নিজের বাবা-মাকে খুব ভালোবাসি এবং আমার শিক্ষার্থীদের বলি বাবা-মাকে সম্মান করুন, ভালোবাসুন এবং প্রত্যেকেই বাবা-মার জন্য এমনভাবে সম্মান এবং বিনোদনের আয়োজন করুন যাতে করে তারা মন থেকে আপনাদের জন্য দোয়া করেন, সবসময় বলেন যে আমার সন্তান সেরা সন্তান।”
“সিনিয়র সিটিজেন ইন্টারটেইনমেন্ট এন্ড কেয়ার অব বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত যে প্রবীণ মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে প্রত্যেকের উচিৎ তাদের বাবা-মাকে পাঠানো এবং এরকম একটি অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানানো, সহায়তা করা। সব বাবা-মা একদিনের জন্য আবার সেই তারুণ্য জীবনে ফিরে যাবেন। কারণ তাদের জীবনটাই তো স্যাক্রিফাইস করেছেন আপনার আমার ভালোর জন্য।” আহবান জানান স্যার শেখ মাজেদুল হক–“তাই যে প্রবীণদের মিলনমেলা হচ্ছে সেখানে আমরা আমাদের বাবা-মা যেন সশরীরে অংশগ্রহণ করে এবং সবাই এরকম বিনোদনের দ্বারা আরো দীর্ঘায়ু লাভ করুক, সুন্দর সতেজভাবে হাসিখুশি একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিক এই প্রত্যাশা কামনা করছি।”
সিনিয়র সিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট কেয়ার অফ বাংলাদেশ (SCECB) আয়োজন করে ”ফিরে দেখা” যার মূল উদ্দেশ্য বাবা – মা ও প্রবীণরা একদিনের জন্য ফিরে যেতে পারেন কিছুুুটা মুহূর্ত শৈশবে ফিরে যেতে। আমাদের বাবা-মা ও প্রবীনদের সুস্থ থাকার জন্য বিনোদন যে খুব জরুরি এবং তারা যে বিনোদন খুব প্রয়োজন এটা দেখানোর জন্য তাদের এই আয়োজন। তাই আপনি একবার হলেও আপনার বাবা-মা ও আপনার প্রিয় প্রবীনদেরকে এই আয়োজনে পাঠিয়ে দিন এবং এই বিনোদন আপনার বাবা-মার জন্য কতটুকু জরুরি তা অনুভব কতে পারবেন।
সিনিয়র সিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট কেয়ার অফ বাংলাদেশ (SCECB) প্রিয় মা–বাবাকে ও প্রবীণ নিয়ে সাম্ভব্য এপ্রিলেই একটি বড় আয়োজন করতে যাচ্ছে, ‘মা-বাবা ও প্রবীণ মিলন মেলা’। উল্লেখ্য, এই আয়োজনে বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে সেরা সন্তান, সেরা মা-বাবা, ও সেরা প্রবীণজুটিকে নির্বাচিত করে সম্মাননা দেওয়া হবে।
প্রয়োজনে: যোগাযোগ করুন ০১৯০৭-৮৩৩৭৫৬ অথবা মেইল করুন manager.scecb@gmail.com এই ঠিকানায়।
এছাড়া তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আপডেট থাকতে, ভিজিট করুন তাদের ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপ ও ইউটিউব চ্যানেলটি।
শ্যাডো নিউজ ‘সিনিয়র সিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট কেয়ার অফ বাংলাদেশ’ এর এমন উদ্যোগ ও কর্মসূচিকে স্বাগত জানায়। সকল বাবা–মা, যেন সব সবসময় হাসি খুশি ও সুখে শান্তিতে থাকে, তাদের আশ্রয় যেন না হয় কোনো বৃদ্ধাশ্রমে।– এই প্রত্যাশা।
আপনার মতামত দিন