নাবিস্কো লজেন্সের কথা মনে আছে? আনারস, কমলা আর লেবুর ছবি দেওয়া চকচকে সেই প্যাকেট? যখনকার কথা বলছি, তখন এই লজেন্সের দাম ছিল আটআনা। এক টাকায় দুইখানা পাওয়া যেত। পরবর্তীতে অবশ্য, এক টাকা হলেও, এখন আর পাওয়ায় যায় না। আসলে এখন ১ টাকায় প্রায় কিছুই পাওয়া যায় না। এখন তো দেশলাইও দুইটাকা। কোন কোন এলাকাতে ১ টাকার কয়েন চলেই না! হরিণমার্কা ১ টাকার নোটও বিলুপ্ত হয়েছে সেই ক-বে-এ-এ। মুদ্রা হয়েও, তাই অমূল্যায়িত ১ টাকা।
যদিও গল্পটা টাকার নয়, শিক্ষার। বাজারে ১ টাকার মূল্যমান নেহাত ফেলনা হলেও, সেই অর্থেই রীতিমত পড়াশোনার ব্যবস্থা করে ফেলেছে কিছু উদ্দমী তরুণ। নাম দিয়েছে ‘১ টাকায় শিক্ষা’। মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া অতিদরিদ্র কিংবা হতদরিদ্রদের জন্য কাজ করে যাওয়া সংগঠনটির প্রত্যেকে প্রতিদিন ১ টাকা করে দিয়ে শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে।
সংগঠনটির পথচলা চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরের বস্তি থেকে। সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ১৫ শিশুকে বিনামূল্যে পড়ানোর মাধ্যমে শুরু হয় “১ টাকার শিক্ষা” কার্যক্রম। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে আরও কয়েকটি রুম ভাড়া করে বিনামূল্যে পড়ানো হচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে।
এক টাকায় শিক্ষা পরিবারের স্কুল ক্যাম্পেইনের একাংশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে সপ্তাহে চার দিন করে শিশু থেকে দশম শ্রেণির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে ক্লাস নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা(আপাতত বন্ধ)। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষা প্রদান করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এসব শিশুর সব ধরনের শিক্ষার খরচ বহন করছে সংগঠনটি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহায়তা করতে স্কুল ক্যাম্পেইন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে চলতি বছর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৫টি স্কুলে স্কুল ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে চার শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ প্রদান করেছেন টিম মেম্বাররা। পাশাপাশি প্রায় ১০০ অসহায় শিশুর চিকিৎসাসেবার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করছে এ সংগঠন। গতবছর ভার্সিটিতে ভতি সংক্রান্ত রেজিট্রেশন ফি সহ ভর্তির টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে এই ভিন্ন উদ্যোগী সংগঠন।
বর্তমানে ২০ সদস্যের কমিটি রয়েছে সংগঠনটিতে পাশাপাশি সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রায় ১৩০০ তরুণ-তরুণী। প্রত্যেক সদস্য দৈনিক এক টাকা করে প্রদান করেন সংগঠনটিতে। এ ছাড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। এ বিশাল সংখ্যক সদস্যের দেওয়া অনুদানের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইট, যেখানে প্রতিটি অনুদানের হিসাব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে গুগল স্প্রেড শিটের মাধ্যমে।
চাইলে আপনিও তাদের কাজে নিজের হাত প্রসস্ত করতে পারেন। দিনে ১ টাকা কিংবা মাসে ৩০ টাকা। এমনকি কয়েক মাসের টাকা একবারেও দিতে পারেন
এমন ভিন্ন উদ্যোগের সুত্রপাত জানতে চেয়েছিলাম সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মো. রিজুয়ানের কাছে। তিনি এক মুখ ভর্তি উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলেন “সর্বপ্রথম আমরা যখন ষোলশহরে কাজ শুরু করি তখন সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়েই ছিলাম সারাক্ষণ। টাকার অভাবে কারও পড়ালেখা বন্ধ হলে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন আমাদের টিম মেম্বাররা। চেষ্টা করছে যারা টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না তদের সহযোগিতা করার। আমাদের সাফল্যের হাসিমুখ গুলায় আমাদের অনুপ্রেরনা যোগায়”
সংগঠনটি নিয়ে সদূর পরিকল্পনার সম্পর্কে জানতে চাইলে রিজুয়ান আরও বলেন, “আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এমন একটি সংগঠন হিসেবে দাঁড়াতে, যে সংগঠনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজের সব মানুষকে একত্র করে তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারব। আগামী বছর আরও শিক্ষার্থীকে সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”
“এক টাকার শিক্ষা” নিয়ে যদি আপনার কোন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ থাকে তাহলে আপনার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবে সংগঠনটি”
তাদের ফেসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইট এর ঠিকানা: